মলয় দত্ত - এর সাথে আলাপ

 



[ মলয় দত্তের নতুন কবিতার বই ' নুরিন যে মইরাছে আমি না বলি কাউরে'। বইটার প্রকাশক মলয় দত্ত নিজেই। নিজের বই নিজে প্রকাশ করা নতুন ঘটনা না। বই প্রকাশ নিয়ে উনি উনার স্টেটমেন্টে ব্যাপারটারে এক্সপেরিমেন্ট বলতেছেন। সেসব নিয়েই মিহিন্দার সাথে কথা বলেছেন মলয় দত্ত। ]


মিহিন্দা : আপনার নতুন বই ' নুরিন যে মইরাছে আমি না বলি কাউরে'। বইটার প্রকাশক আপনি নিজেই। সাহিত্যের অনেক বেস্টসেলার এবং শিল্পমানসম্পন্ন বইয়ের প্রথম প্রকাশকই লেখক নিজে। এ সময়ে এটা কতোটা প্রাসঙ্গিক? 

মলয় দত্ত : এইটা আমার কাছে একটা এক্সপেরিমেন্ট। অনেক এর কাছে বাল পাকনামি মনে হইতে পারে, আই ডোন্ট কেয়ার, আর এখন থেকে এই ডোন্ট কেয়ার ভাব সাব নিয়াই বাঁচতে চাই যতদিন বাচবো বা এই ভাবটাই আমারে মানে মলয় দত্তরে বাঁচাইয়া রাখবে আর আমি আমার এই বইয়ের স্টেটমেন্টে বলেছি, আজকের দিনে নিজের বই নিজে পাবলিশ করা প্রাসঙ্গিক, ভালোভাবেই, আমি স্টেটমেন্টে বলেছি 

Nowadays, of course, it’s easier than ever for writers to self-publish and reach our readers.

Back in Dickens’s day (yes, he was self-published too), there was a whole lot of touring involved just to get your work noticed. These days, all you need is a social media presence and some money to spend on advertising. in the end, how your book is published doesn’t really matter. What matters is the connection you create with your audience. Nothing beats talking to someone and discovering that they love your creations as much as you do.


মিহিন্দা : এটা কি প্রচলিত প্রকাশনা ব্যবস্থার প্রতি রাগ, ক্ষোভ থেকেই করা?

মলয় দত্ত : না। রাগ ক্ষোভ নাই। আগামী বইমেলায় আমার বই এইসব প্রচলিত জায়গা দিয়া আসার সম্ভাবনাও আছে, এগো লগে আমার বিরোধ নাই। 


মিহিন্দা : অনেক সেলিব্রিটির বস্তাপঁচা বই সমানে বিক্রি হচ্ছে, দুর্বল কনটেন্টের উপন্যাস মানুষ হুমড়ি খেয়ে কিনছে, ভালো বই বিক্রি হচ্ছেনা। এটার জন্যে আপনি কোন বিষয়টাকে দায়ী করবেন?

মলয় দত্ত : যার যেরম রুচি সে তাই পড়ে। আমাগো অধিকাংশ পাঠকের রুচিই হইলো আমি তুমি গোলাপ ফুল টাইপ লেখা পড়া, এরা মার্কেজ না কাফকা বা বাদ দেন এরা মাহমুদুল হক বা শহীদুল জহিররেও আবিস্কার করতে পারছে কিনা সন্দেহ, ১০-১৫ টা হুমায়ুন আহমেদের বই আর নীলক্ষেতের ১০০ টাকার ইংলিশ বই কিইন্না  খুব একটা ইন্টেলেকচুয়াল সাইজা আছে বা মুখোশ পরছে সত্যিকার অর্থে এরা সিরিয়াস সাহিত্য আর পড়তে পারার যোগ্যতাহীন হইয়া যাইতেছে মানে সবাই না অনেকেই কারন আজ আমার দেশে যেসব বই বেস্টসেলার হয় সেগুলা আসলে একটাও বেস্টসেলার হওয়ার যোগ্য কিনা তা নিয়া আমার সন্দেহ আছে তো এই বেস্টসেলার তাগোরে যেসব পাঠক বানাইছে তারা যে আমাগো এক্সপেরিমেন্টাল লেখা পড়বে তা আমার আর বিশ্বাস ও হয়না। 


মিহিন্দা : আপনার কি মনে হয় প্রচলিত প্রকাশনা ব্যবস্থা বা প্রকাশনার বিগ হাউজগুলো নতুন যারা লিখতে আসছে তাদেরকে বাজারি হয়ে উঠতে বাধ্য করছে? 

মলয় দত্ত : নাহ আমার এরম মনে হয়না, উলটা কিছু লেখক জনপ্রিয় হওয়ার জন্য বাজারি লেখা লেখতাছে, তাগোর লেখায় কোনো এক্সপেরিমেন্ট পাবেন না, ঘোর নাই, ক্যারেক্টারের বিল্ড আপ নাই, তারা বিতর্কিত বা হুমায়ুনেরও ভাষারে নকল কইরা সস্তা কান্না কান্না আবহ তৈরী কইরা জনপ্রিয় হওয়ার এক ধান্ধায় নামছে আর তারা ভুইলা গেছে হুমায়ুন আজাদ বইলা গেছে জনপ্রিয়তা হইলো অধপতন এর সিড়ি বা তারা চায় আজ লিখতে এসে কালকেই চার ৫ টা সাহিত্য পুরস্কার ঘরে নিয়া যাইয়া সাজাইয়া ছবি তুইলা আপলোড দিতে হবে বা কালকের মধ্যেই তাগোরে বেস্ট সেলার হইয়া ওঠাই লাগবে...হোক তা যত জঘন্য উপায়ে। 


মিহিন্দা : অনেক প্রকাশকই এটা বলেন, এখনকার লেখকদের বই থেকে লগ্নিকৃত টাকা উঠে আসে এমন লেখক হাতেগোনা। এটার কারণ হিসেবে আপনি কোনটাকে দেখেন প্রকাশকদের বিপণন ব্যবস্থা নাকি অন্য কোনকিছু? 

মলয় দত্ত : প্রকাশকদের মার্কেটিং সিস্টেম খারাপ। এরা খালি বই ই ছাপায়। বইয়ের সংখ্যা বাড়ায়। একটা বই ছাপাইতে ধরেন ২০ হাজার টাকা লাগলো, তাগোর উচিত ঐটা আরো ৫-১০ হাজার টাকা এক্সট্রা খরচ করা প্রমোশন এর জন্য সেইটা হউক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়া ফেসবুক বুস্ট করে বা রকমারি বুস্ট বা আরো নানান ভাবে কিন্তু সেইটা তারা করেনা যে কারণে সবথেকে ভালো কবি গল্পকার বা ধরেন যেকোনো ধরনের রাইটার একদম সাধারন পাঠক এর কাছে পৌঁছাইতেই পারেনাই। এইটা মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ভুলভাল আকারে পরিচালানার কারনে প্রকাশকরা এমন করতেছে আবার অনেক সময় ইয়াং রা তো টাকা দিয়া প্রকাশনী দিয়া বই ছাপায় প্রকাশক তখন ভাবে টাকাতো পাইয়াই গেছি আর এই দেশে রয়্যালটি পায় কয়জনে? সুতরাং প্রকাশকরা প্রমোট শব্দটা বা ব্যাপারটা ভুইলা গেছে, কারন তারা তাগোর লাভ পাইতাছে, সেইটা খারাপ লেখা বেইচা হোক বা নামধারী কারো বস্তাপঁচা লেখা ছাইপা হোক, তো প্রমোট তারা করেনা যার ফলে অনেক ভালো লেখক তলানিতে পইড়া গেছে যাইতাছে যাবে, ধরেন আমিই একজন৷ 


মিহিন্দা : আপনার বইটার বিপননও আপনি নিজেই করছেন।বিপণনকারী যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদের প্রতি অনাস্থা থেকেই কি এটা করছেন?

মলয় দত্ত : বিপনন ব্যবস্থার অবস্থা তো শোচনীয়। বাতিঘর, পাঠক এরা দুই এক কপি বই যে রাখেনা তা না, কিন্তু যেইভাবে ডিসপ্লে করে ঐটা আসলে আমার ব্যক্তিগত ভাবে ভাল্লাগেনা। কারন ইয়াং রাইটার দের যেইভাবে প্রমোট করার দরকার সেইটা তারা হয়তো করেনাই বা করছে আমার ভালোলাগেনাই তাই আমি নিজেই নিজের বই অনলাইনে বিক্রি করি। অনলাইন মানে ফেসবুক তো নিজেই বিশাল মিডিয়া এইটা দিয়া আমি নিজেই ১২ মাস অফ থাকি কিন্তু এখন অন কইরা বিক্রির একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাইতেছি দেখা যাক কি হয়, আজকে তো ৭-৮ কপি অর্ডার হইলো, আমার তো মনে হয়না লাইব্রেরী গুলায় দিলে এত হইতো... মানে ঐ যে কইলাম 

Self-publishing gives people of all backgrounds the chance to reach readers without the stigma, prejudice, and pressure of traditional publishing.

Instead of focusing on short-term sales, you can focus on long-term success. Instead of it being about the number of books sold, it’s about the depth of the connection you create with your readers. And in the end, isn’t that all that really matters?


মিহিন্দা : বইটা সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলে কী বলবেন আপনি?

মলয় দত্ত : আমি সবসময় টানা গদ্যে লেখি, আর এই ৫-৬ বছর অল্প সময়েই আমি আমার নিজস্ব ভাষার একটা স্টাইল তৈরী করছি,এইটা এমন যে দশটা লেখা নামহীন রাখলে আপনি বুঝবেন মানে দশটার মধ্যে দিয়া চিনা নিতে পারবেন যে কোনটা মলয় দত্তের লেখা।

তো এই বইটাও তার ব্যতিক্রম না তা আমি বলবোনা  কারন একজন লেখক হিসেবে আমার কাজ হচ্ছে ডে বাই ডে ভাষাগত দিক দিয়া ডেভলপ হওয়া। বইটায় আমার অনেক পুরান লেখা ও আছে, নতুন লেখাও আছে৷ অনেক কাটছাট কইরাই ২৫-২৬ টা কবিতা রাখছি আমি। 


মিহিন্দা :আপনার বইয়ের জন্যে শুভকামনা।

মলয় দত্ত : ধন্যবাদ রাফাতুল আপনাকে

Post a Comment